কিভাবে সঠিক ভাবে ইসলামীক নিয়ম মেনে ঘুমাবেন,শরীর সুস্থ রাখন ।
একটু শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য আমরা কত কিছুই না করি। কিন্তু সফলতাই বা কতটা অর্জন করতে পারি। পরিষ্কার বিছানার চাদর, শোবার আগে স্নান করে ঘুমানো, অন্য ঘরে ফোন রেখে ঘুমানো যাতে কোনও ভাবে ফোনের আওয়াজে ঘুম না ভাঙে। এসব কিছু করার পরেও আপনার যে শান্তিপূর্ণ ঘুম হবে সেটা নিশ্চিত নয়। জেনে নিন ঘুম কিভাবে শোবার অবস্থানের উপর নির্ভরশীল-
প্রথমত :- সব থেকে সঠিক অবস্থান হল শবাসনে শোওয়া। এই অবস্থানে ঘুমালে পিঠের ব্যথা কমে যায়, ঘুমও খুব আরামের হয়। কিন্তু মাত্র ৮ শতাংশ লোক এই অবস্থানে ঘুমান।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘ন্যাশানাল স্লিপ ফাউন্ডেশন’-এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
যে কোনও একটি দিক করে শুলে কাঁধ, নিতম্বের হাড় এবং কোমড়ে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এভাবেই ঘুমান।
আন্তর্জাতিক মনরোগ বিশেষজ্ঞ সেলবি হ্যারিস জানাচ্ছেন, কেউ যদি একদিক ফিরে বাংলা বর্ণ ‘দ’এর মত ঘুমান, তাহলে সব সময় একটি নেকপিলো, এবং পায়ের মাঝে একটি বালিশ রাখুন, এতে ব্যথা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকবে না।
আর যাই হোক, কখনও উপুড় হয়ে শোবেন না। এতে পাকস্থলীর উপর চাপ পড়ে। শুধু তাই নয়, সারা শরীরে এর ফলে ব্যথা হতে পারে। এই অবস্থানে কখনও ঘুমাবেন না।
রসুল (সা.) সব সময় ডান পাশ হয়ে ডান হাতের তালুর ওপর মুখমণ্ডলের অংশ বিশেষ (গাল) রেখে কিবলামুখী হয়ে শয়ন করতেন। এর কারণ অজানা নয়। বুকের বাম পাশে হৃৎপিণ্ডের অবস্থান। চিকিৎসকরা সব সময় হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ প্রয়োগে নিষেধ করেছেন। সুতরাং কেউ বাম পাশ হয়ে শয়ন করলে স্বাভাবিকভাবেই তার হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়বে। রসুল (সা.) ঘুমানোর আগে এক খণ্ড বস্ত্র দিয়ে তিনবার তার বিছানা পরিষ্কার করে নিতেন যাতে কোনো বিষাক্ত পোকামাকড় তাকে কামড়ানোর সুযোগ না পায়।
আমাদের আজ ভাবতে অবাক লাগে ১৪০০ বছর আগে যখন আধুনিক কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না তখনকার সময়ে উম্মি নবী (সা.) আমাদের ঘুমানোর আদর্শ পদ্ধতি বাতলে গেছেন। তাঁর উপদেশ ছিল প্রজ্ঞাময় ও রহমতস্বরূপ। রসুল (সা.) এশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতেন এবং রাতের শেষভাগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। আবু হুরায়রা (রা)-এর মতে, ‘রসুল (সা.) এশার নামাজের পর ঘুমাতে পছন্দ করতেন। তিনি এশার পর কথা বলা পছন্দ করতেন না।’ দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের শহরের লোকেরা গভীর রাত পর্যন্ত টিভি দেখে ঘুমাতে যায়, তাদের অনেকেই সূর্য ওঠার আগে ফজরের নামাজই পড়তে পারে না। এশার নামাজ জামাতে পড়ার পর ফজরের নামাজও জামাতে পড়া হলে সারা রাতই নামাজে কেটেছে ধরে নেওয়া হয়। রসুল (সা.) সূর্য ওঠার পর ঘুমানোকে রিজিকের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করতেন। দিন কাজের জন্য আর রাত বিশ্রাম বা আরামের জন্য, রাত নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য। সময় থাকা সাপেক্ষে দিনের বেলায় দুপুরের আহারের পর একটু বিশ্রাম (কায়লুলাহ) করে নেওয়া যায়। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এর ফলে রাতের বেলায় আল্লাহর ইবাদতে যে কষ্ট হয় তা লাঘব হয়। এর জন্য গভীর ঘুমের প্রয়োজন হয় না। এর জন্য শুধু বিছানায় শুয়ে একটু বিশ্রাম নিলেই চলে। সাহল ইবন সা’দ (রা) বলেন, ‘আমরা কায়লুলাহ করতাম আর জুমার নামাজের পর আহার করতাম।’ আসলে যারা রাতে ঘুমায় না তারা অজ্ঞ ছাড়া কিছুই নয়। রসুল (সা.) ঘুমাতে যাওয়ার আগে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে তোমার শাস্তি হতে রক্ষা কর যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের একসাথ করবে বা তোমার বান্দাদের জীবিত করে উঠাবে।’ চিকিৎসা বিজ্ঞানও অতিরিক্ত রাত জাগার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাই আসুন আমরা ইসলামী বিধানের আলোকে ঘুমানোর অভ্যাস করি।