করোনার ভয়ে ডাক্তার দের চিকিৎসা না দেওয়ায় আরেকটি গর্ভবতী মায়ের জীবন দিতে হবে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তখন। রাজধানীর আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (এমসিএইচটিআই) ভেতর থেকে মধ্যবয়সী এক নারীর কাঁধে ভর করে ধীর পায়ে হেঁটে আসছিলেন আনুমানিক ১৯-২০ বছরের অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণী। একটি ব্যাগ হাতে পিছু পিছু আসছিলেন এক তরুণ। খবর-জাগোনিউজের।
রাস্তায় আসতেই তলপেটে হাত দিয়ে ‘মাগো’ বলেই চিৎকার করে উঠলেন ওই তরুণী। সাথে থাকা মধ্যবয়সী সেই নারী দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন, ‘পোয়াতি মাইয়াডার হেই সকাল বেলা পানি ভাঙছে, তিনডা হাসপাতালে ঘুইরাও বাচ্চা ডেলিভারির লাইগ্যা ভর্তি করাইতে পারলাম না। মাগো, গরিবের লাইগ্যা হাসপাতালে ডেলিভারি নাইরে, যাই বাসায় গিয়া দেহি নরমাল ডেলিভারি হয় কি-না?
আরেকটি মা বাচ্চা প্রসবের বেধনা নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরার কথা বলছি।
তার স্বামী শিপন পেশায় প্রাইভেটকার চালক, ধানমন্ডিতে থাকেন। অন্তঃসত্ত্বা তরুণী তার স্ত্রী, নাম তানিয়া। সঙ্গের মধ্যবয়সী নারী তার ফুফু।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিপন জানান, আগামী মাসের ৩ মে তানিয়ার সন্তান জন্মদানের (ডেলিভারি) তারিখ দিয়েছিলেন চিকিৎসক।
কিন্তু আজ সকাল ৯টায় তানিয়ার প্রসববেদনা শুরু হয়। পানি ভাঙতে শুরু করায় (অ্যামনিওটিক মেমব্রেন রাপচার) তিনি তার ফুফুকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরের সরকারি মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাতে যান। দু’মাস আগে সেখানেই তানিয়ার ডেলিভারি ও চেকআপের জন্য কার্ড করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখানে ডেলিভারি সেবা বন্ধ রয়েছে বলে বিদায় করে দেয়।
সুমন জানান, তানিয়াকে প্রসব বেদনায় কাতরাতে দেখে দিশেহারা সুমন ও ফুফু ছুটে যান ইস্কাটনের বেসরকারি আদ-দ্বীন হাসপাতালে। কিন্তু টিকিট কেটে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তানিয়ার শরীরে জ্বর রয়েছে। তাই কোন পরীক্ষা ছাড়াই করোনা পজেটিভ বলে বিদায় করে দিতে চান। শিপন ও তার ফুফু চিকিৎসকদের প্রয়োজনে করোনা টেস্ট করে ভর্তি করানোর জন্য অনুরোধ জানালেও তারা গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী তাদের পরামর্শ দেন, আজিমপুর মাতৃসদনে গেলে সন্তান ডেলিভারি করাতে পারবেন তানিয়ার। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। আজিমপুর মাতৃসদনে জরুরি বিভাগ টিকিট দেওয়া হয়নি।
কর্তব্যরত চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দেন, যেখানে কার্ড করেছিলেন সেখানে যান।
যন্ত্রণায় কাতর তানিয়া জানান, তার পেট কেমন শক্ত হয়ে যাচ্ছে। তার খুব খারাপ লাগছে। শেষপর্যন্ত অনেকটা বিপর্যস্ত চেহারায় তিনি স্ত্রী ও ফুফুকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে ছুটতে থাকেন।